স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে?
স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে এ সম্পর্কে জেনে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন। অনলাইন ব্যবসা এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জগতে একটি ওয়েবসাইটের হেলথ ও বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে অনেক ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়, যার মধ্যে স্প্যাম স্কোর অন্যতম। স্প্যাম স্কোর হল এমন একটি মেট্রিক যা ওয়েবসাইটের স্প্যামি বা অনৈতিক কার্যকলাপের সম্ভাবনাকে মূল্যায়ন করে। এই স্কোরটি ওয়েবসাইটের সার্বিক স্বাস্থ্য ও সার্চ ইঞ্জিনের র্যাংকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
স্প্যাম স্কোর কি?
স্প্যাম স্কোর হল এমন একটি মেট্রিক যা ওয়েবসাইটের স্প্যামি আচরণের সম্ভাবনাকে নির্ধারণ করে। মূলত, এটি Moz নামক একটি SEO সফটওয়্যার কোম্পানি দ্বারা তৈরি একটি মেট্রিক যা ওয়েবসাইটের অনৈতিক বা সন্দেহজনক কার্যকলাপের ভিত্তিতে স্কোর দেয়। স্কোরটি ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে দেওয়া হয়, যেখানে উচ্চ স্কোর মানে ওয়েবসাইটটি স্প্যাম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্প্যাম স্কোর বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যেমন: অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকলিংক, কপিরাইটেড কনটেন্ট, এবং সন্দেহজনক কীওয়ার্ড ব্যবহারের হার ইত্যাদি। স্প্যাম স্কোর একটি ওয়ার্নিং সিগনাল হিসেবে কাজ করে, যা ওয়েবসাইটের মালিককে তার সাইটের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত করে এবং সমস্যাগুলি সমাধান করার সুযোগ দেয়।
স্প্যাম স্কোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক কারণ এটি একটি ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) প্রভাবকে নির্ধারণ করে। যদি কোনও ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর বেশি হয়, তবে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর চোখে সেই ওয়েবসাইটটি অনির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং এর ফলে র্যাংকিং কমে যেতে পারে। স্প্যাম স্কোর কম রাখতে হলে সঠিক এসইও প্র্যাকটিস মেনে চলা এবং নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইট মনিটরিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে?

ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং এবং বিশ্বাসযোগ্যতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্প্যামি লিঙ্ক, নিম্নমানের কনটেন্ট এবং অনৈতিক এসইও কার্যকলাপের মতো ফ্যাক্টরগুলো স্প্যাম স্কোর বাড়াতে সহায়তা করে। স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল-
১| নিম্নমানের ব্যাকলিংক
নিম্নমানের বা সন্দেহজনক উৎস থেকে ব্যাকলিংক পেলে স্প্যাম স্কোর বৃদ্ধি পায়। ব্যাকলিংক হল এমন লিঙ্ক যা অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে নির্দেশ করে। যখন একটি ওয়েবসাইটে অনেক নিম্নমানের ব্যাকলিংক থাকে, তখন এটি সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা সন্দেহজনক মনে হতে পারে। গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন নিম্নমানের ব্যাকলিংককে স্প্যামি বা অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে বিবেচনা করে এবং এ ধরনের লিঙ্ক ওয়েবসাইটের সার্চ র্যাংকিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২| অতিরিক্ত কীওয়ার্ড স্টাফিং
কীওয়ার্ড স্টাফিং হল এমন একটি কৌশল যেখানে কনটেন্টে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অতিরিক্ত কীওয়ার্ড যোগ করা হয়, যা মূলত সার্চ র্যাংকিং বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়। এই পদ্ধতিটি স্প্যামি আচরণের মধ্যে পড়ে এবং গুগল এলগরিদম দ্বারা সহজেই সনাক্ত করা যায়। অতিরিক্ত কীওয়ার্ড স্টাফিং কনটেন্টের প্রাসঙ্গিকতা এবং মান কমিয়ে দেয় এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে খারাপ করে। এটি সার্চ ইঞ্জিনকে সংকেত দেয় যে ওয়েবসাইটটি অনৈতিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
৩| অর্গানিক ট্র্যাফিকের অভাব
ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্র্যাফিকের অভাবও স্প্যাম স্কোর বাড়ার একটি বড় কারণ হতে পারে। যখন একটি ওয়েবসাইটে খুব কম অর্গানিক ভিজিটর থাকে এবং এর অধিকাংশ ট্র্যাফিক পেইড সোর্স থেকে আসে, তখন সার্চ ইঞ্জিনের চোখে এটি সন্দেহজনক মনে হতে পারে। অর্গানিক ট্র্যাফিক একটি ওয়েবসাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং স্প্যাম স্কোর কমাতে সহায়তা করে।
৪| কপিরাইটেড কনটেন্ট ব্যবহার
অন্যান্য সাইট থেকে কপিরাইটেড কনটেন্ট চুরি করে ব্যবহার করা একটি গুরুতর অপরাধ এবং এটি ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর বাড়ায়। কপিরাইটেড কনটেন্ট ব্যবহার করা মানে হচ্ছে অন্যের তৈরি কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা, যা আইনত দণ্ডনীয়। এমনকি অল্প পরিমাণে কপিরাইটেড কনটেন্ট পেলেও সার্চ ইঞ্জিনের এলগরিদম সাইটটিকে পেনালাইজ করতে পারে এবং স্প্যাম স্কোর বাড়িয়ে দেয়।
৫| লোড টাইম বা পেজ স্পিডের সমস্যা
ওয়েবসাইটের পেজ স্পিড যদি খুব কম হয়, তবে এটি ইউজারদের জন্য বিরক্তিকর হয়ে ওঠে এবং সার্চ ইঞ্জিন সাইটটির র্যাংকিং কমিয়ে দেয়। লোড টাইমের সমস্যা ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর বাড়িয়ে দিতে পারে কারণ এটি ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। সাইটের লোড টাইম কম রাখতে নিয়মিতভাবে সাইট অপ্টিমাইজ করা এবং অপ্রয়োজনীয় স্ক্রিপ্ট সরিয়ে ফেলা উচিত।
৬| ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টে কম মডারেশন
যদি সাইটে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট থাকে, যেমন ফোরাম পোস্ট বা কমেন্ট, এবং তা পর্যাপ্ত মডারেশন ছাড়া হয়, তবে স্প্যাম স্কোর বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ইউজাররা যদি স্প্যামি লিঙ্ক বা অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট শেয়ার করে, তাহলে সার্চ ইঞ্জিন সাইটটিকে সন্দেহজনক হিসাবে বিবেচনা করতে পারে। এজন্য ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের মডারেশন সিস্টেম থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
৭| ডোমেইন বা হোস্টিংয়ের দুর্বলতা
নিম্নমানের বা সন্দেহজনক ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিসের ব্যবহারও স্প্যাম স্কোর বৃদ্ধি করতে পারে। অনেক সময় সস্তা হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করা হলে সাইটের পারফরম্যান্স এবং সিকিউরিটি কমে যায়, যা স্প্যাম স্কোর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উচ্চমানের এবং বিশ্বস্ত ডোমেইন ও হোস্টিং সার্ভিস নির্বাচন করা সাইটের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
৮| অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্টের ব্যবহার
অপ্রাসঙ্গিক বা নিম্নমানের কনটেন্ট সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা কমায় এবং সার্চ ইঞ্জিনের চোখে স্প্যাম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সঠিক টপিক নির্বাচন এবং গুণমানপূর্ণ কনটেন্ট প্রডাকশনের অভাব স্প্যাম স্কোর বাড়াতে সহায়ক। কনটেন্টের মান বজায় রাখতে এবং ইউজারদের উপযোগী তথ্য প্রদান করতে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
৯| অতিরিক্ত পপ-আপ বিজ্ঞাপন
অতিরিক্ত পপ-আপ বিজ্ঞাপন সাইটের ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং এটি ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর বাড়াতে পারে। সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ইউজার এক্সপেরিয়েন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, এবং অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে সাইটটি স্প্যামি মনে হতে পারে। পপ-আপ বিজ্ঞাপনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত রাখতে এবং ইউজারদের জন্য কম বিরক্তিকর হতে কনটেন্ট প্রদর্শনের পদ্ধতি বিবেচনা করা উচিত।
১০| এসইও-এর ভুল প্রয়োগ
এসইও স্ট্রাটেজি ভুলভাবে প্রয়োগ করাও স্প্যাম স্কোর বৃদ্ধির একটি কারণ। যেমন, ব্ল্যাক হ্যাট এসইও টেকনিক ব্যবহার, যা স্প্যামি লিঙ্ক বিল্ডিং, হিডেন টেক্সট, এবং কীওয়ার্ড স্টাফিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে র্যাংকিং বাড়ানোর চেষ্টা করে, যা শেষ পর্যন্ত স্প্যাম স্কোর বাড়ায়। ওয়েবসাইটের র্যাংকিং বাড়াতে নৈতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, যেমন কনটেন্টের গুণমান বৃদ্ধি, প্রাসঙ্গিক ব্যাকলিংক তৈরি এবং নিয়মিত সাইট অডিট করা।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর কীভাবে চেক করতে পারি?
স্প্যাম স্কোর চেক করার জন্য Moz-এর লিঙ্ক এক্সপ্লোরার টুল ব্যবহার করা যায়, যা ওয়েবসাইটের স্প্যামি লিঙ্ক এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ করে স্প্যাম স্কোর প্রদান করে।
স্প্যাম স্কোর কমাতে কী করতে হবে?
স্প্যাম স্কোর কমাতে হলে উচ্চ মানের ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে, কীওয়ার্ড স্টাফিং এড়াতে হবে, কপিরাইটেড কনটেন্ট ব্যবহার না করে এবং নিয়মিত সাইট অপ্টিমাইজ করতে হবে।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর একটি গুরুতর বিষয় যা ওয়েবসাইটের সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। একটি উচ্চ স্প্যাম স্কোর ওয়েবসাইটের র্যাংকিং কমিয়ে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্প্যাম স্কোর কম রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং সঠিক এসইও প্র্যাকটিস মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন অনুসরণ করে এবং কনটেন্টের গুণমান বজায় রেখে ওয়েবসাইটকে স্প্যাম স্কোর থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই, ওয়েবসাইটের স্প্যাম স্কোর কম রাখতে নিয়মিতভাবে ব্যাকলিংক চেক করা, কপিরাইটেড কনটেন্ট ব্যবহার না করা, এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করতে সচেষ্ট থাকা উচিত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্য অন পেজ এসইও তে কি কি করতে হয় সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ুন।
“স্প্যাম স্কোর কি? স্প্যাম স্কোর কেন বাড়ে?” সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন। আর এমন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বিনামূল্যে জানতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।